
ইউক্রেনকে ৯০০ কোটি ইউরো জরুরি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। একই সঙ্গে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে একমত হয়েছেন ইইউর নেতারা। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।
২৭ সদস্যের এই জোট জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ তারা রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি কমিয়ে আনবে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দনবাসে রুশ বাহিনী হামলা জোরদার করায় মস্কোর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে গতকাল সোমবার ইইউ এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

রাশিয়া থেকে জ্বালানি পণ্য আমদানির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বসেন ইইউ নেতারা। বৈঠকে ইউক্রেনকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি জোটসদস্য হাঙ্গেরিসহ কয়েকটি দেশের উদ্বেগ সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল টুইটে জানান, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে যুদ্ধবাজ রাশিয়াকে শাস্তি দেওয়া হবে। যুদ্ধে রুশ অর্থায়নের বিপুল উৎস বন্ধ হবে। সর্বোপরি যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগও করা যাবে। অন্যদিকে বৈঠক শেষে ব্রাসেলসে সংবাদ সম্মেলনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লিয়েন বলেন, জার্মানি ও পোল্যান্ড প্রতিশ্রুতি মেনে তাদের ভূখণ্ডে পাইপলাইনে রুশ জ্বালানি তেল আমদানি কমিয়ে আনবে।
ইউক্রেনের দনবাসে জোর লড়াই চলছে দুই পক্ষের। গত কয়েক দিনে হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী। লুহানস্কের আঞ্চলিক গভর্নর সের্গেই গাইদে জানান, পুরো অঞ্চলজুড়ে টানা বোমাবর্ষণের ঘটনা ঘটছে। সড়কে ঘুরছে ট্যাংক, সাঁজোয়া যান। ইইউর বৈঠকে জেলেনস্কি বলেন, দনবাসের পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত মারাত্মক’।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এ নিয়ে ছয়বার রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল ইইউ। তবে সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবে শুরুতে আপত্তি জানিয়েছিল হাঙ্গেরি। কেননা ভূবেষ্টিত রাষ্ট্রটি অনেকাংশে রুশ জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় হাঙ্গেরিকে এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। তা ছাড়া দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর ওরবান রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিবেচিত।
এ ছাড়া সোমবারের বৈঠক থেকে অনলাইনে অর্থ লেনদেনের বৈশ্বিক মাধ্যম সুইফটে রুশ প্রতিষ্ঠান এসবার ব্যাংকের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাশিয়ার তিনটি সম্প্রচারমাধ্যমকেও কালো তালিকাভুক্ত করেছে ইইউ।
জোটের সদস্য না হলেও ইইউর বৈঠকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি ইইউ নেতাদের প্রতি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে নিজেদের মধ্যকার মতপার্থক্য দূর করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এটা বিভাজনের, আলাদা আলাদা কাজ করার সময় নয়। এটা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়।’
এটা বিভাজনের, আলাদা আলাদা কাজ করার সময় নয়। এটা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময়।
ইইউ নেতাদের উদ্দেশে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
এদিকে ইউক্রেনের দনবাসে জোর লড়াই চলছে দুই পক্ষের। গত কয়েক দিনে হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী। লুহানস্কের আঞ্চলিক গভর্নর সের্গেই গাইদে জানান, পুরো অঞ্চলজুড়ে টানা বোমাবর্ষণের ঘটনা ঘটছে। সড়কে ঘুরছে ট্যাংক, সাঁজোয়া যান। ইইউর বৈঠকে জেলেনস্কি বলেন, দনবাসের পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত মারাত্মক’।

লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চলের সমন্বয়ে গঠিত গোটা দনবাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় রাশিয়া। অবশ্য ওই অঞ্চলের একটি বড় অংশ আগে থেকেই রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেভেরোদোনেৎস্ক ও লিসিচানস্ক দখল করতে পারলে লুহানস্কের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ মস্কোর হাতে চলে যাবে। এতে প্রায় তিন মাস পর একধরনের বিজয় ঘোষণার সুযোগ পাবে ক্রেমলিন। এ জন্য সেখানে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে যুদ্ধ করছে মস্কো। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সেনারাও রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন।